১৫ অক্টোবর, ২০২২ ইং, ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এলাকায় নিরাপত্তা সংস্কৃতি চর্চা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান শুরু হয়। মানিকনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন একটি অনুষ্ঠানের (গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডে বা বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস) জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর পালিত হয়। অনুষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল পানি এবং সাবান দিয়ে সহজে হাত ধোয়ার মাধ্যমে কীভাবে একাধিক রোগের বিরুদ্ধে দক্ষতার সাথে লড়াই করা করা যায় সেই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের শেখানো।
“হ্যান্ড ওয়াশিং ইজ ইওর সুপার পাওয়ার” নামের ইভেন্টটি রোসাটমের প্রকৌশল বিভাগ (রূপপুর পারমাণবিকবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ডিজাইনার এবং কন্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করছেন), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তিকমিশন (BAEC) এবং পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্র এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঈশ্বরদী উপজেলার ৫টি বিদ্যালয়ের ৫৩৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবং সবাইকে বাস যোগে নিজ নিজ বিদ্যালয় হতে মানিকনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নিয়ে আসা হয়। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে মানিকনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পাশাপাশি “পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্র, ঈশ্বরদী” এর পক্ষ হতে নলেজ টেবিল, ডার্ট বোর্ড, ফিজিকাল যেঙ্গা ইত্যাদি ইন্টারেক্টিভ গেমের আয়োজন করা হয়।বিদ্যালয়ের মেয়েরা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গান পরিবেশন করে এবং কবিতা আবৃত্তি করে, রাশিয়ান অংশগ্রহণকারীরাও একটি প্রাণবন্ত নৃত্যে যোগ দেন।
এএসই জেএসসি কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান নিনা ডেমেনসোভা স্বাগত বক্তব্যে স্কুলছাত্রীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। তার বক্তৃতায়, তিনি মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য সহজে হাত ধোয়ার তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন “আমরা সবাই জানি যে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা মানব জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ নোংরা হাত দিয়ে অনেক রোগ ছড়াতে পারে। অতএব, ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের স্বাস্থ্য বিধি শেখানো উচিত”। এরপর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। তার বক্তৃতায়, তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলেন এবং উল্লেখ করেন যে তিনি বাচ্চাদের জন্য এত আকর্ষণীয় এবং এত বড় আকারের নিরাপত্তা সংস্কৃতি চর্চা বিষয়ক অনুষ্ঠান আগে কখনও দেখেননি। তিনি আরও বলেন, “আমি বিশেষ করে বাচ্চাদের নাচ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, বাচ্চারা খুব খুশি হয়েছিল এটি দেখতে অনেকটা রাশিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ নাচের মতো। এই শিশুরা আমাদের দেশের ভবিষ্যত এবং তাদের মাধ্যমে আমাদের শহরের সমস্ত বাসিন্দাদের মধ্যে নিরাপত্তা সংস্কৃতির গুরুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে”।
অতঃপর, লালপুর উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ হাসানুজ্জামান রোগ প্রতিরোধে হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সঠিক কৌশল প্রদর্শন করেন। এরপরে উপস্থিত সমস্ত শিক্ষার্থীরা তাদের হাত সঠিকভাবে এবং আনন্দের সাথে বিশেষভাবে তৈরি করা ওয়াশ বেসিনে ধুয়েছিল। হাত ধোয়ার সকল উপকরণ যেমন, সাবান, ট্যিসু ইত্যাদিসহ টি–শার্ট, স্টিকার, ফ্লায়ার (কীভাবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি নিয়মগুলি অনুসরণ করতে হয় তার সহজ, স্পষ্ট এবং দৃষ্টান্ত মূলক উদাহরণ সম্বলিত) এবং নাস্তা সকলের মধ্যে সম্পূর্ন বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।
গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডে উদযাপনের জন্য নির্ধারিত ইভেন্টগুলি দুই সপ্তাহ ব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। যেমন, পাবনায় অবস্থিত স্কয়ার টয়লেট্রিজ প্ল্যান্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় ট্যুর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এলাকা থেকে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলির জন্য বিশেষ নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদিত হবে।