![রাশিয়ায় রূপপুর এনপিপির যন্ত্রপাতি প্রস্তুতে অগ্রগতি](https://bdnuclear.energy/wp-content/uploads/2020/07/NEWS-19.07.2020.jpg)
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের পাশাপাশি রাশিয়াতেও এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।
এটোমাস বাংলাদেশের জন্য নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ এর রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলের টেস্টিং সম্পন্ন করেছে। এটোমাস হলো রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এটমএনার্গোমাসের একটি অংশ।
প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর যন্ত্রপাতি প্রস্তুতের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন, টেকনিক্যাল কন্ট্রোল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্প্রতি রাশিয়ার ভলগাদন্সকে ‘এইএম টেকনোলজি’ ‘এটোমাস’ কারখানায় এবং ‘প্রেত্রাজাভোদস্ক’ কারখানায় এ প্রক্রিয়াগুলো সস্পন্ন করা হয় ৷ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও এ তথ্য জানা যায়৷
তিনি আরো বলেন, রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলটি পুরোপুরি সীল করে একটি ভূগর্ভস্থ ‘কেইসন’-এ পরীক্ষাটি করা হয়। প্রেসার ভেসেলটি বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পূর্ণ করার পর পানির তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে এবং অভ্যন্তরীণ চাপ ২৪.৫ মেগা প্যাসকেলে (অপারেটিং চাপের তুলনায় ১.৪ গুণ বেশী) উন্নীত করে পরীক্ষা সম্পাদন করা হয়। রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল সিলিন্ডার আকৃতির একটি উল্লম্ব কাঠামো যার ভিতরে রিয়্যাক্টর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি অবস্থান করে।
একইভাবে ইউনিট-১ এর জন্য প্রস্তুতকৃত একটি বাষ্প জেনারেটরেরও হাইড্রোলিক টেস্ট সম্পন্ন হয়। প্রথমে একটি বিশেষ ঢাকনির মাধ্যমে জেনারেটরের সকল ছিদ্র বন্ধ করে দেয়া হয়। এটির প্রথম ও দ্বিতীয় সার্কিট বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পূর্ণ করা হয় এবং প্রথম সার্কিটে পানির তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও অভ্যন্তরীণ চাপ ২৪.৫ মেগাপ্যাসকেল-এ উন্নীত করে পরীক্ষা চালানো হয়। দ্বিতীয় সার্কিটেও একই পরীক্ষা চালানো হয় যেখানে পানির তাপমাত্রা ছিল ৩০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও অভ্যন্তরীণ চাপ ১১.৪৫ মেগাপ্যাসকেল। উভয় ক্ষেত্রেই চাপের পরিমাণ অপারেটিং চাপের তুলনায় ১.৪ গুণ বেশি ছিল।
বাষ্প জেনারেটর হিট এক্সচেঞ্জার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিটে এমন চারটি বাষ্প জেনারেটর থাকবে এবং প্রত্যেকটি বাষ্প জেনারেটরের ওজন ৩৫০টন, দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং ব্যাস ৪ মিটারের বেশি। ইতোপূর্বে বাষ্প জেনারেটরের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্বে এটির তলদেশের ওয়েল্ডিং সম্পন্ন হয় একই কারখানায়। তলদেশ ওয়েল্ডিং-এর পূর্বে এর ভিতরে এসজি টিউব স্থাপন করা হয়। স্বয়ংক্রিয় ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় সময় লাগে ৫ দিন, ব্যবহৃত হয় ৭০০ কেজি ওয়েল্ডিং রড ও ৯০০ কেজি ফ্লাস্ক।
তার পাশাপাশি ‘এইএম টেকনোলজি’ ‘প্রেত্রাজাভোদস্ক’ কারখানায় ইউনিট-১ এর জন্য চারটি কুল্যান্ট পাম্পের সংযোজন ও ওয়েল্ডিং সম্পন্ন হয়েছে। একটি পাম্পের ওজন ৩১ টনের বেশি, উচ্চতা ৩.৫ মিটার এবং ব্যাস ৩ মিটারের অধিক। পরবর্তী পর্যায়ে এগুলোর গুণগত মান পরীক্ষা করা হবে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের মেশিন প্রস্তুত শাখা- এটমএনার্গোমাসের একটি অংশ হলো এইএম টেকনোলজি। এটির দুটি শাখা রয়েছে- ভলগাদন্সক এবং প্রেত্রাজাভোদস্ক। রূপপুর প্রকল্পের রিয়্যাক্টর প্রকোষ্ঠের সকল যন্ত্রপাতি এবং টারবাইন হলের যন্ত্রপাতির বড় অংশ সরবরাহ করছে এটমএনার্গোমাস।
প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, যন্ত্রপাতি নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও প্রকল্পে কর্মরত বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। এছাড়াও রাশিয়ার মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি নিউক্লিয়ার সেকশন খোলা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানের নেতৃত্বে মস্কোর আশপোশে যেসব কারখানায় যন্ত্রপাতি নির্মাণ হচ্ছে তা সিডিউল করে নিয়মিত কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রূপপুর এনপিপি বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যেখানে রাশিয়ার সর্বাধুনিক ৩+প্রজন্মের দুটি রাশিয়ান ভিভিয়ার- ১২০০ চুল্লি স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২,৪০০ মেগা-ওয়াট। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।