প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন
কিছু লিখুন
প্রেরণ করুন
পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম ব্যাচ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে
০৫.১০.২০২৩

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (এনপিপি) নির্মাণ প্রকল্প সাইটে (প্রকল্পের সাধারণ ডিজাইনার এবং সাধারণ কন্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করছেন রাশিয়ান স্টেট কর্পোরেশন রোসাটমের প্রকৌশল বিভাগ) পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম ব্যাচের বিতরণ উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে।

ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইইএ) এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রথম এনপিপি কর্তৃক অর্জিত পারমাণবিক স্থাপনার মর্যাদা প্রাপ্তি সর্ম্পকে আলোকপাত করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রাশিয়ান স্টেট কর্পোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং অন্যান্য সরকারি অতিথিরা।

দুই দেশের সরকার প্রধান রূপপুর এনপিপি নির্মাণস্থলে পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহের প্রতীকী অনুমতি দিয়েছেন। তারপর, রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ, বাংলাদেশে সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানকে একটি শংসাপত্র দেন, যা সমস্ত নিরাপত্তা মান এবং প্রয়োজনীয়তা মেনে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে। রূপপুর এনপিপি-এর জ্বালানি রাশিয়ায় নোভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কনসেনট্রেটস প্ল্যান্টে (এনসিসিপি), রোসাটমের জ্বালানি বিভাগের একটি উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিএইআরএ) এর সক্রিয় নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে জ্বালানি উৎপাদন ও পরিবহণ করা হয়েছিল।

রোসাটমের প্রতিনিধি জানান, “এই দিনটি রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নে একটি নতুন ধাপ নির্দেশিত করে। পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহের পর, রূপপুর এনপিপি একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এবং বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তির অধিকারী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। রোসাটমের জন্য, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা একটি বড় সম্মানের বিষয় যা স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের অপরূপ প্রকৃতি সংরক্ষণে সহায়তা করবে”।

এদিকে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক, শিক্ষামূলক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরমাণু শিল্প ও শিক্ষায় রাশিয়ান এবং বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রস্তুত করা বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে অন্যতম হল “স্কুল পাঠ”।

স্কুল পাঠের সময়, শিক্ষার্থীদের পারমাণবিক জ্বালানি, এর ব্যবহার এবং কর্মদক্ষতা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তাদের একটি জ্বালানি প্যিলেটের মডেল সম্বলিত লিফলেট দেওয়া হয়েছিল। এরপর তাদের পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি ফিল্ম দেখানো হয়েছিল এবং এরপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল।

প্রতিটি স্কুল একটি পারমাণবিক জ্বালানি প্যিলেটের মডেল সহ লিফলেট সমন্বিত শিক্ষামূলক কীট, পরমাণু শক্তি সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সম্বলিত ব্রোশিওর “জানার আছে অনেক কিছু” ও “পরমাণু পেশা”, ব্যাজ এবং ব্যাগ উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ০৪ অক্টোবর পর্যন্ত, ২০টি ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে মোট ২০টি পাঠ অনুষ্ঠিত হয়েছে, এতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা প্রায় ১৪০০ জন।

এছাড়াও, ০২ অক্টোবর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আবাসিক এলাকা “গ্রীন সিটি” -তে ফেস্টুন, আর্ট ইনস্টলেশন বা দেয়াল অঙ্কনসহ নানা সাজসজ্জার আয়োজন করা হয়। দেয়াল অঙ্কনটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেশ ওসমান, এএসই জেএসসি-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট – রূপপুর এনপিপি নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আলেক্সি দেরি, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং রাশিয়ান স্টেট কর্পোরেশন রোসাটমের প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করেন। দেয়াল অঙ্কনের দ্বায়িত্বে ছিলেন ঢাকার বিখ্যাত শিল্পী টিপু সুলতান।

আর্ট ইনস্টলেশনটি বাংলাদেশের পারমাণবিক শিল্পের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সমস্ত অতিথিরা ঐতিহ্যবাহী বাংলা শৈলীতে উচ্চ স্তরের গ্রাফিক এক্সিকিউশনটি পছন্দ করেছেন এবং আস্থা প্রকাশ করেছেন যে এই ধরনের ইনস্টলেশন স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য প্রাসঙ্গিক হবে।

প্রসজ্ঞতঃ গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের জ্বালানির প্রথম ব্যাচ। ২৯ সেপ্টেম্বর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জ্বালানি নেওয়া হয় প্রকল্প এলাকায়। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
রাশিয়ান সরকার এবং বড় রাশিয়ান কোম্পানিগুলি অংশীদার দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে খুব মনোযোগ দেয়। এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা, জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি এবং নিকটবর্তী অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। রাশিয়ান স্টেট কর্পোরেশন “রোসাটম” এর উদ্যোগগুলি এই কাজে সক্রিয় অংশ নেয়।