রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প—এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায়। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)-এর উদ্যোগে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জানানো হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে না। ফলে এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং বায়ু দূষণ হ্রাসে কার্যকর অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর নির্দেশনা অনুসরণ এবং আধুনিক ভিভিইআর–১২০০ প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্পটিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে কৃষি, মৎস্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।
বক্তারা আরও জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ তাদের জীবনযাত্রায় এর ইতিবাচক প্রভাব অনুভব করছেন এবং প্রকল্পের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন।
স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রকল্পের সম্পৃক্ততা জোরদারের লক্ষ্যে পাকশী সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিদর্শন বাংলো চত্বরে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় কৃষক, মৎস্যজীবী, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও পুরোহিত অংশগ্রহণ করেন। সভায় আলোচনা পর্বের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের তথ্যচিত্র প্রদর্শন, মুক্ত আলোচনা, প্রশ্নোত্তর পর্ব, কুইজ প্রতিযোগিতা ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. খালেকুজ্জামান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার, প্রকল্পের চিফ সুপারিনটেন্ডেন্ট মুশফিকা আহমেদ এবং ডেপুটি চিফ সুপারিনটেন্ডেন্ট ও ভৌত সুরক্ষা বিভাগের প্রধান এস এম মাহমুদ আরাফাত। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল হাসান। সর্বসাধারণ পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্র, ঈশ্বরদী -এর একজন প্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনপিসিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসান বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি একটি নির্ভরযোগ্য ও কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ উৎস হিসেবে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, এটি বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কোনো কার্বন নিঃসরণ ঘটে না। ফলে কৃষি, মৎস্যসহ পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
তিনি কুলিং টাওয়ার থেকে নির্গত জলীয় বাস্প পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় বলেও উল্লেখ করেন এবং জানান, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রূপপুর প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সেফগার্ড নিশ্চিত করে প্রকল্পের ফিজিক্যাল স্টার্টআপের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি সভায় জানান।
