প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন
কিছু লিখুন
প্রেরণ করুন
সর্বসাধারণ পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ অঞ্চলে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্‌যাপন করেছে
০৮.০৬.২০২৪

৫ ই জুন ২০২৪ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটম ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বিএইসি) এর সহযোগিতায় সর্বসাধারণ পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্র কার্বন-মুক্ত শক্তি এবং সচেতন ব্যয় বিষয়ে চারদিন ব্যাপী বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

অনুষ্ঠানগুলি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একত্রে সমবেত হয়ে শিখতে পারার এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করেছিল। অনুষ্ঠানগুলি কার্বন-মুক্ত শক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষিত করার লক্ষ্যে সাজানো হয়েছিল এবং এতে মোট ১,৫০০ জনেরও বেশি লোক অংশগ্রহণ করেছিল।


জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এটোমেস্ট্রোয়এক্সপোর্ট (এএসই-রোসাটম স্টেট কর্পোরেশন প্রকৌশল বিভাগ) এর কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান নিনা ডেমেনসোভা জানান, “এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলি আয়োজন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বিষয়। আমরা পরিবেশগত বিষয়বস্তুকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং রূপপুর এনপিপি নির্মাণ প্রকল্পের সাধারণ কন্ট্রাকটর হিসাবে, আমরা এই অঞ্চলের পরিবেশগত সমস্যাগুলির জন্য দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করি। টানা তিন বছরের ন্যায়, আমাদের অনুষ্ঠানগুলিতে বিপুল সংখ্যক আগ্রহী অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হয়েছেন এবং এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আমরা সবকিছু ঠিকঠাক করছি।”

৫ ই জুন ধারাবাহিক অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন সকালে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) এর সহযোগিতায় পাবিপ্রবির ক্যাম্পাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সচেতন ব্যবহার এবং জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষার্থে এর গুরুত্ব আলোকপাত করে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়। এদিন যৌথ আয়োজনে সচেতনতা শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর প্রদক্ষিণ করে। পাবিপ্রবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান রাহীদুল ইসলাম রাহীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন  পাবিপ্রবি উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থ ও পরিবেশ নীতি বিশেষজ্ঞ এবং চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবিপ্রবি এর কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. কে এম. সালাহ উদ্দিন। প্রধান আলোচক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম। সেমিনারে বক্তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব রুখতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে তাগিদ দেন।


একই দিনে ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সর্বসাধারণ পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্রে একটি শিক্ষণীয় এবং আনন্দদায়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদেরকে অব্যবহার্য পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয় যেমন প্লাস্টিকের বোতল, সংবাদপত্রের মতো বর্জ্য পদার্থ। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা সেই সব অব্যবহার্য পণ্য সামগ্রী থেকে পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র তৈরি করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে কীভাবে দরকারি এবং সুন্দর জিনিসপত্র তৈরি করতে হয় তা শিখতে পেরেছে।


পরদিন ৬ ই জুন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ মাঠে “ট্র্যাশ টু ট্রেজার চ্যালেঞ্জ” স্কেভেঞ্জার হান্ট গেমের আয়োজন করা হয়। এই উদ্ভাবনী টিম গেমটি অংশগ্রহণকারীদের বর্জ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে এবং প্রতিদিনের ফেলে দেওয়া ব্যবহার্য জিনিসপত্রের সম্ভাব্যতা আবিষ্কার করতে উৎসাহিত করার জন্য আয়োজন করা হয়। এটি একটি টিম গেম যেখানে অংশগ্রহণকারীদের নানান রকম অব্যবহার্য জিনিসপত্র সম্বলিত একটি ব্যাগ দেওয়া হয়, যা দিয়ে তারা ব্যবহারযোগ্য নতুন এবং কার্যকরী কিছু তৈরি করে। শিক্ষার্থীদের বানানো ব্যবহারযোগ্য নতুন এবং কার্যকরী জিনিসগুলো সকলের সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং সম্মানিত বিচারকদের মতামতের ভিত্তিতে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং পুরস্কৃত করা হয়।

একই দিনে ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সর্বসাধারণ পারমাণবিক তথ্য কেন্দ্রে একটি শিক্ষামূলক কার্টুন “ট্যুমোরো” দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাবিপ্রবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান রাহীদুল ইসলাম রাহী উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি সচেতন ব্যবহার, কার্বন-মুক্ত ক্লিন এনার্জি এবং ক্লিন এনার্জির উৎস সম্পর্কে আলোচনা করেন।


ডক্টর রাহী তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আয়োজিত রোসাটম-এর সাথে যৌথ সেমিনার আমাদের শিক্ষার্থীদের, পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা দূর করা এবং পরিবেশ সম্পর্কে বিশদে জানতে পারার দুর্দান্ত সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। শিক্ষার্থীরা উক্ত সেমিনারে অংশগ্রহণ করে শিখতে সক্ষম হয়েছিল যে, কীভাবে আমরা আমাদের পরিবেশগত পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারি এবং কীভাবে আমরা আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে পারি। এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলি টেকসই অনুশীলনগুলোকে অসংখ্য আগ্রহী দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। আমরা অংশগ্রহণকারীদের শিখিয়েছি এবং তারা এই জ্ঞান তাদের সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে দিবে, যা টেকসই পরিবেশ এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে সকলকে আরও সচেতন”।


তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানমালার মূল আকর্ষণ ছিল – ঈশ্বরদী অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং কার্বন-মুক্ত ক্লিন এনার্জির উৎস হিসেবে পারমাণবিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জনসাধারণের জন্য বিশেষ আয়োজন, মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে এই আয়োজন রূপ নেয়। পাবিপ্রবির এর অনিরুদ্ধ নাট্যদল এই আয়োজনে সম্পৃক্ত হয়েছিল। শহরের আরআরপি কমিউনিটি সেন্টারে এই নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। “পরিবেশ বাঁচাও, ভবিষ্যৎ বাঁচাও” এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে নাটকটির প্লট তৈরি করা হয়।


এছাড়া ৭ তারিখ ঈশ্বরদী পৌরসভা প্রাঙ্গণে ঈশ্বরদী অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের জন্য পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্রের দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব পণ্যের প্রসার নিয়ে বসেন বিভিন্ন উদ্যোক্তারা। মূলত ঈশ্বরদী অঞ্চলে উৎপাদিত সকল ধরনের পরিবেশ বান্ধব পণ্যের প্রচার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ বান্ধব পণ্যের ব্যবহারে আগ্রহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

৮ই জুন ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রকিয়াকরণ অঞ্চলে অবস্থিত পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড -এ শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করে পাবিপ্রবি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব পরিবেশে সবুজ কারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থা দেখার সুযোগ পায়।

এই সমস্ত অনুষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি “হাউ টু বিকাম এন এনভাইরোমেন্টাল হিরো” শিরোনামে সিরিজ অব ইন্টারেক্টিভ লেসন এর আয়োজন করা হয়। যেখানে ঈশ্বরদী উপজেলার ১৫টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারীরা সচেতন ব্যয় এবং “কার্বন-মুক্ত শক্তি” সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠের আয়োজন করে। স্ব-পরিচালিত এই ইন্টারঅ্যাকটিভ পাঠ আয়োজন করার জন্য আগেই সমস্ত নির্দেশনা সম্বলিত নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। সকল অংশগ্রহণকারী শিক্ষক শিক্ষিকাদের শ্রেণি পাঠ বিশেষজ্ঞ বিচারক দ্বারা মূল্যায়ন করে প্রথম তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয় এবং প্রথম স্থান অধিকারকারী শিক্ষিকার বিদ্যালয়কে চারটি বিজ্ঞান বাক্স উপহার দেওয়া হয়।