মস্কোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফোরাম ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক বা বিশ্ব পারমাণবিক সপ্তাহ -এ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল, যেখানে দেশের প্রতিনিধিরা পারমাণবিক শক্তির উন্নয়ন এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। এই ফোরামে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, জ্বালানি কোম্পানি ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন, যা বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তির প্রতি বৈশ্বিক আগ্রহের ক্রমবর্ধমানতা তুলে ধরে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এবং ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশন (ডাব্লিউএনএ)-এর মহাপরিচালক সামা বিলবাও ও লিওন জানান, ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো দেশগুলো পারমাণবিক শক্তি সম্প্রসারণে এগিয়ে আসছে, আর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে।
সামা বিলবাও ও লিওন বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল বিদ্যুৎ চাহিদা (প্রতি বছর ৭% হারে) পূরণের জন্য পারমাণবিক শক্তির স্থিতিশীলতা ও নির্ভরযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি)-এর ২টি রিঅ্যাক্টর থেকে মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে। তিনি বলেন, “রূপপুর বাংলাদেশের জন্য এক বিপ্লবাত্মক সুযোগ। এটি সাফল্যের এক উজ্জ্বল গল্প!”
রাশিয়া ও রোসাটম আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে পারমাণবিক প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রপতির নির্বাহী দপ্তরের প্রথম উপপ্রধান সের্গেই কিরিয়েনকো বলেন, পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদি ও আস্থাভিত্তিক সম্পর্কই সফলতার মূল চাবিকাঠি। বর্তমানে বিশ্বের ২৭টি পারমাণবিক রপ্তানি প্রকল্পের মধ্যে ২৪টিই রোসাটম পরিচালিত। একসময় নির্জন নদীতীর রূপপুর আজ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অগ্রগতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
রোসাটম ফোরামে প্রদর্শন করেছে তাদের আধুনিক অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং প্রযুক্তি, যা উপস্থাপন করেন রোসাটমের অ্যাডিটিভ টেকনোলজি ডিরেক্টর ইলিয়া কাভেলাশভিলি। কোম্পানিটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে, যাতে বিমান, চিকিৎসা ও উৎপাদন খাতে রুশ অ্যাডিটিভ প্রযুক্তি রপ্তানি করা যায়।
বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের তরুণ পেশাজীবীরা অংশ নেন “কানেক্টেড বাই ওয়ান অ্যাটম: টেকনোলজিস ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট” শীর্ষক এক রাউন্ডটেবিল আলোচনায়। সেখানে তারা পারমাণবিক ও সবুজ শক্তি, শিল্পের ভবিষ্যৎ ধারা এবং নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে মতবিনিময় করেন। আলোচনায় রোসাটমের পার্টনার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতকেরা অংশ নেন—যাদের মধ্যে ৬০টিরও বেশি দেশের ১,০০০-এর বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থী বর্তমানে পারমাণবিক প্রকৌশল ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করছেন।
ব্যবসায়িক আলোচনার পাশাপাশি অতিথিরা রূপপুর প্রকল্প সম্পর্কিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন এবং বাংলাদেশের পারমাণবিক শক্তির অগ্রযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারেন। তারা ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবারও উপভোগ করেন, যা প্রযুক্তিগত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে আরও সমৃদ্ধ করে।
ফোরামটি দেখিয়েছে—টেকসই উন্নয়নের ভবিষ্যতে পারমাণবিক শক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, আর সেই যাত্রায় বাংলাদেশ এখন দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলছে।
(ছবি: স্ট্রানা রোসাটম সংবাদপত্র, রোসাটম কর্পোরেট একাডেমি)
